• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

নারায়ণগঞ্জে ভোট রোববার, নৌকা-হাতির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

প্রকাশ:  ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ২১:৪১ | আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ০২:১৬
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

সারাদেশের দৃষ্টি এখন নারায়ণগঞ্জে। রাজধানীর পাশের এই গুরুত্বপূর্ণ সিটিতে ভোট হবে রোববার (১৬ জানুয়ারি)। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে নৌকা ও হাতির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে । এ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে। এ জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে দুই হাজার ৯১২টি ইভিএম মেশিন। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনের তুলনায় দেড়গুণ ইভিএম রাখা হবে। এরই মধ্যেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে পৌঁছানো হয়েছে নির্বাচনী সামগ্রী। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচনে সহিংসতা রোধে ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পেনাল কোডের অধীনে তারা মামলা নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারবেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে এবার মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াত আইভী (নৌকা), খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার (হাতি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম (ঘোড়া)।

সিটি করপোরেশনে ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি কেন্দ্রের এক হাজার ৩৩৩ ভোটকক্ষে পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত নয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ৩৪ জন প্রার্থী।

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ঘিরে এখন চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এখন ভোটের অঙ্ক মেলাতে ব্যস্ত মেয়র পদে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিনা হায়াত আইভী ও তৈমূর আলম খন্দকারের নির্বাচনী শিবির। সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের কোনটিতে নিজেরা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন, কোনটিতে পিছিয়ে আছেন, তার তথ্য বিশ্লেষণ করছে দুই পক্ষই।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, সাতটি ওয়ার্ডে নৌকার প্রার্থী কিছুটা পিছিয়ে আছেন বলে মনে করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। এই ওয়ার্ডগুলো হলো ১, ২, ৩, ১১, ১২, ১৩ ও ২৭। এসব ওয়ার্ডে মূলত দুই কারণে নৌকা পিছিয়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমত, এখানে বেশ কয়েকটি মাদরাসা রয়েছে। ফলে এসব এলাকায় হেফাজতে ইসলামের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। তাদের নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে বরাবরই নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেন। দ্বিতীয়ত, এসব ওয়ার্ডে দলের মধ্যেও কোন্দল রয়েছে। একাধিক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। ফলে তাঁরা মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন না।

বিগত নির্বাচনে ১ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থীর চেয়ে কম ভোট পান আইভী। নগরীর সরদারপাড়ার অংশ, নিউ খানপুর, মজিদ খানপুর, ইসদাইর, মিশনপাড়া, উত্তর চাষাঢ়া নিয়ে গঠিত ১২ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে টানা তিনবারের কাউন্সিলর বিএনপি নেতা শওকত হাশিম। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, শওকত বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় দণ্ডিত ক্যাপ্টেন কিসমতের ভাই। ফলে এই ওয়ার্ডে আইভীর প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমূর বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন।

কয়েকটি ওয়ার্ডে খারাপ অবস্থা থাকলেও তা নৌকার জয়ের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা। তাঁরা মনে করেন, অন্য ওয়ার্ডগুলোতে আইভী বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকবেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা যখন আইভীর পক্ষে নির্বাচনের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তখন তৈমূর আলম খন্দকারের ভরসা স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নিজের হাতি প্রতীকের নির্বাচনী কাজ চালাচ্ছেন তৈমূর।

তৈমূরের নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত একাধিক বিএনপি নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ছয়টি ওয়ার্ডে নৌকা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। এসব ওয়ার্ড হচ্ছে—১৪, ১৫, ১৬, ১৮, ২১ ও ২২। ওয়ার্ডগুলোতে নৌকার সুবিধাজনক অবস্থানের কারণ হলো—এই এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটার বেশি। আবার সেলিনা হায়াত আইভীর বাড়িও এখানে। ফলে এসব ওয়ার্ডে তাঁর বিশেষ জনপ্রিয়তা রয়েছে। ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আবু সুফিয়ানের প্রভাব রয়েছে। তিনি আইভীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

ছয়টি ওয়ার্ড বাদে সিটি করপোরেশনের অন্য ২১টি ওয়ার্ডে হাতি প্রতীক খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। তারা মনে করেন, সুষ্ঠু ভোট হলে হাতি প্রতীক বড় ব্যবধানে জয় পাবে।

নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ জানিয়ে পূর্বপশ্চিমকে মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আমি শুধু চাই একটি সুষ্ঠু ভোট। জনগণ ভোট দিতে পারলে আমি বড় ব্যবধানে জয় পাব। যে কোনো মূল্যে আমি শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকতে চাই।

নৌকার মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীও জয়ে আশাবাদি। পূর্বপশ্চিমকে তিনি বলেন, আমি খুবই সাধারণভাবে জীবনযাপন করা গরীব ঘরের মানুষ। আমার ব্যক্তিগত কোনো চাওয়াপাওয়া নাই। আমি চাই নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন। নারায়ণগঞ্জের মানুষ গত দুই মেয়াদে আমার কাজ দেখেছেন। তারা চান উন্নয়নে গতি অব্যাহত থাকুক। তাই এবারও তাদের ভোটে আমি জয়ী হবো বলো আশা রাখি।

সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার জানান, নারায়ণগঞ্জে আলাদাভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নেই, সবগুলো কেন্দ্রকেই বিশেষ বিবেচনায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৯২টি ভোট কেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন এসআইয়ের নেতৃতে থাকবেন পাঁচজন করে পুলিশ সদস্য। এছাড়াও আটজন পুরুষ ও চারজন নারী আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।

তিনি বলেন, নাসিক নির্বাচনে পুলিশের ২৭টি ইউনিট স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। এছাড়াও পুলিশের মোবাইল টিম থাকবে ৬৪টি, প্রতি টিমে সদস্য থাকবেন পাঁচজন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১৪ প্লাটুন সদস্য থাকবে। আরও অতিরিক্ত ৬ প্লাটুনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠিয়েছেন বলেও জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এদিকে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ৯টি সংস্থার ৪২ পর্যবেক্ষককে অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংস্থাগুলো হলো- জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ), সার্ক মানবাধিক ফাউন্ডেশন, আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন, সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, তালতলা যুব উন্নয়ন সংগঠন, রিহাফ ফাউন্ডেশন, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন এবং মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা-মওসুস।

পূর্বপশ্চিম- এনই

নারায়ণগঞ্জে ভোট রোববার,নৌকা-হাতি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই,নৌকা-হাতি,নাসিক,নারায়ণগঞ্জ সিটি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close